২০২৫ সালে রমজান ও ঈদুল ফিতর কবে? ২০২৫ সালের রোজা কবে শুরু হবে
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য পবিত্র মাস, যা সাওম (রোজা) পালন, ইবাদত-বন্দেগি ও আত্মশুদ্ধির সময়। প্রতি বছর আরবি (হিজরি) ক্যালেন্ডার অনুসারে রমজান মাসের শুরু হয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে। তাই নির্দিষ্ট তারিখ আগে থেকে বলা কঠিন হলেও, জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালে রমজান ও ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ জানা সম্ভব। ২০২৫ সালে রমজান শুরু কবে?
২০২৫ সালে রমজান শুরু কবে?
জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ইসলামিক ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রমজান মাস শুরু হতে পারে ১ মার্চ ২০২৫ (শনিবার)। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।
২০২৫ সালে ঈদুল ফিতর কবে? ২০২৫ সালের রোজা কবে শুরু হবে
২০২৫ সালে বাংলাদেশে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২ বা ৩ মার্চ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২ মার্চ তারিখ ধরে সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করেছে। তাদের প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী, ২ মার্চ প্রথম রমজানে ঢাকায় সেহরির শেষ সময় ভোর ৫টা ৪ মিনিট এবং ইফতারের সময় সন্ধ্যা ৬টা ২ মিনিট। citeturn0search2
রমজান মাস সাধারণত ২৯ বা ৩০ দিনব্যাপী হয়। সেই হিসেবে, যদি রমজান ২৯ দিনে শেষ হয়, তবে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে ৩১ মার্চ, আর যদি ৩০ দিন পূর্ণ হয়, তবে ঈদুল ফিতর হবে ১ এপ্রিল। তবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে এই তারিখগুলো পরিবর্তিত হতে পারে।
সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে। ঢাকার সময়ের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সময়ের পার্থক্য থাকতে পারে; সাধারণত সর্বোচ্চ ৯ মিনিট যোগ বা বিয়োগ করে সেহরি ও ইফতার করতে হয়। সঠিক সময়সূচি জানতে স্থানীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা মসজিদের ঘোষণার ওপর নির্ভর করা উচিত।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, যা ২৯ শাবান ১৪৪৬ হিজরি। সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে পারেন।
রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত
রমজান মাস হলো আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং গুনাহ মাফের মাস। এই মাসে মুসলমানরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যাবতীয় ইন্দ্রিয়সুখ থেকে বিরত থাকেন এবং ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকেন। কুরআনে বলা হয়েছে:
“রমজান মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতরূপে এবং সত্যপথ ও অসত্যপথের পার্থক্য নির্ধারক হিসেবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এতে রোজা রাখে।” (সূরা বাকারা: ১৮৫)
রমজানের বিশেষ কিছু ফজিলত হলো:
- এই মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে।
- শয়তানদের বন্দি করে রাখা হয়।
- গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যায়।
- লাইলাতুল কদরের রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
- আল্লাহ রোজাদারদের জন্য জান্নাতের বিশেষ দরজা ‘রাইয়ান’ নির্ধারণ করেছেন।
ঈদুল ফিতর ও এর তাৎপর্য
ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য আনন্দের দিন, যা রোজার পর পুরস্কার স্বরূপ আসে। এই দিনে মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায় করেন, দান-সদকা করেন এবং পরস্পরের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। ঈদের দিন সকালবেলায় গরিব ও অসহায়দের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। এটি ঈদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
হাদিসে এসেছে: “রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি ঈদের দিন সাদকাতুল ফিতর আদায় করে না, তার রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।” (আবু দাউদ)
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি পবিত্র রমজান মাসের সমাপ্তির পর উদযাপিত হয়। ‘ঈদ’ শব্দের অর্থ হলো আনন্দ বা খুশি, আর ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ হলো ভাঙা বা ইফতার করা। অর্থাৎ ঈদুল ফিতর মানে রমজানের দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর উৎসবের মাধ্যমে ইফতার বা উপবাস ভঙ্গ করা।
ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য
১. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উপলক্ষ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর এই দিন আনন্দ ও শুকরিয়া আদায় করা হয়।
- সামাজিক সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ: ঈদুল ফিতর ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসে। ঈদের নামাজে সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, যা সামাজিক সাম্যের প্রতীক।
- সাদাকাতুল ফিতর ও দান-খয়রাত: ঈদুল ফিতরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সাদাকাতুল ফিতর প্রদান। এটি ঈদের নামাজের আগে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে হয়, যাতে তারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
- স্নেহ-মমতা ও পারিবারিক বন্ধন: ঈদুল ফিতর পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এবং সম্পর্ক দৃঢ় করার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে।
- আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের শিক্ষা: রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষকে ধৈর্য, সংযম ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেয়। ঈদুল ফিতর সেই আত্মসংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের এক মহিমান্বিত উদযাপন।
ঈদুল ফিতর উদযাপনের পদ্ধতি
মিষ্টান্ন ও বিশেষ খাবার খাওয়া: ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার ও মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়, যা পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করে।
ঈদের আগের রাত: ঈদের আগের রাতকে ‘চাঁদ রাত’ বলা হয়। এ রাতে মুসলমানরা ঈদের প্রস্তুতি নেয় এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে।
গোসল ও নতুন পোশাক পরিধান: ঈদের দিন সকালে গোসল করা সুন্নত এবং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা উত্তম।
ঈদের নামাজ আদায়: ঈদের দিন মুসলমানরা বিশেষ ঈদের নামাজ আদায় করে, যা সাধারণত মসজিদ বা খোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়।
সাদাকাতুল ফিতর প্রদান: ঈদের নামাজের আগে গরিবদের মধ্যে ফিতরা প্রদান করা হয়।
একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময়: ঈদের নামাজ শেষে মুসলমানরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
ফিতরা ও দানের গুরুত্ব
ফিতরা হল ঈদের আগে গরিবদের মাঝে বিতরণের জন্য নির্ধারিত দান। ২০২৫ সালে ফিতরার হার নির্ধারিত হবে খেজুর, গম, যব বা আটা ইত্যাদির বাজারমূল্যের ভিত্তিতে।
শেষ কথা – ২০২৫ সালের রোজা কবে শুরু হবে
২০২৫ সালের রমজান ও ঈদুল ফিতরের সঠিক তারিখ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করবে। তাই রমজান শুরু ও ঈদের চূড়ান্ত তারিখ জানতে হলে চাঁদ দেখার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজান যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন। ২০২৫ সালের রোজা কবে শুরু হবে